শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ই-পেপার | আজকের পত্রিকা | আর্কাইভ | কনভার্টার অর্গানাইজেশন

করোনা ভাইরাস: বাংলাদেশে কি দ্বিতীয় ধাপ শুরু হতে যাচ্ছে? সরকারের প্রস্তুতি কতটা?

সংক্রমণ হার কমে আসার পর সম্প্রতি বাংলাদেশে আবার বাড়তে দেখা গেছে
সংক্রমণ হার কমে আসার পর সম্প্রতি বাংলাদেশে আবার বাড়তে দেখা গেছে

বাংলাদেশে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এসে হঠাৎ করে আবার একদিনে শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এর আগে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা, আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর হার একটু একটু করে কমে আসছিল।

যদিও নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার কখনোই দশ শতাংশের নিচে নামেনি।

টানা কয়েকদিন ধরেই সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে যে এটা কি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ বা ২য় ধাপের শুরু? সেক্ষেত্রে সরকারের প্রস্তুতি কী?

সরকারের প্রস্তুতি

বাংলাদেশে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে সরকার বলে আসছে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শীতে বাড়বে। সেজন্য কয়েকবার প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদও দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর সতর্কতা ছাড়াও মহামারি নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও কয়েকবারই পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুতির কথা বলেছেন।

যে কারণে এ সপ্তাহে যখন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেল, সবাই একে দ্বিতীয় ধাপের সঙ্গে মেলাতে শুরু করেছেন।

Banner image reading 'more about coronavirus'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছিলেন, শীতে সংক্রমণ বাড়বে সেই আশংকা মাথায় রেখে নানা রকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

“এতদিনে আমাদের চিকিৎসকেরা জানেন কিভাবে এই রোগের চিকিৎসা করতে হবে, এবং শুরুতে মাত্র কয়েকটা ল্যাবরেটরিতে টেস্টিং হত, সে সংখ্যা এখন ১১৭টি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে।

মাঝখানে সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় আমরা ভেবেছিলাম আমাদের প্রস্তুতি কিছুটা সংকুচিত করে নিয়ে আসব। এখন আর সেটা করা হচ্ছে না।”

“ঢাকায় এবং প্রতিটা জেলায় যতগুলো হাসপাতালকে আমরা কোভিডের জন্য প্রস্তুত করেছিলাম, সেগুলো কোভিডের জন্য প্রস্তুত থাকবে। যদিও নন-কোভিড অসুখের জন্য এখন সেগুলোর কিছু অংশ ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু রোগীর সংখ্যা যদি বৃদ্ধি পায় তখন যাতে ব্যবহার করা যায়, সেভাবে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপ সামাল দিতে হলে নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।

তারা বলছেন, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে যত দ্রুত সংক্রমিত মানুষ চিহ্নিত করা যাবে, তত দ্রুত তার চিকিৎসা এবং পরিবারের অন্যদের আইসোলেশনে রাখা এবং অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে।

এক্ষেত্রে পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি র‍্যাপিড টেস্টিং চালু করা জরুরি।

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, প্রয়োজনে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো হবে। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা কবে থেকে বাড়বে, আর কিভাবে সেটা করা হবে, তা নিয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, রোগীর সংখ্যা বাড়ার আগে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চায় সরকার, সেজন্য এখন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ব্যাপরে সরকার কঠোর হচ্ছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকা এবং খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে বের হবার জন্য কারাদণ্ড ও জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিন্তু দেশে সংক্রমণের প্রথম দফায় নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতি ও ভোগান্তি, এবং রোগীকে জরুরি অবস্থায় সেবা দেয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থার ঘাটতি ছিল।

অর্থাৎ একদিকে পর্যাপ্ত আইসিইউ সুবিধা, অক্সিজেন সরবারহের ব্যবস্থা অপ্রতুল ছিল, সেই সঙ্গে সেবাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রীরও ঘাটতি ছিল।

সরকার বলছে, সেই সব ঘাটতি পূরণে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে, যদিও প্রয়োজনের তুলনায় এখনও তা যথেষ্ট নয়।

কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেছেন, প্রথম দফার সময় যে আকস্মিক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে

“পিপিই এখন আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে আছে। একই সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার কিটের সংখ্যাও পর্যাপ্ত পরিমাণে কেনা হয়েছে।

এরপর ল্যাব তখন নতুন করে করতে হয়েছিল, এখন তো আমাদের ১১৭টি আছে, প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হবে। আবার অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা অনেকগুণ বাড়ানো হয়েছে।”

তিনি বলছিলেন, “সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম ছিল না অনেক জেলায়, এখন অনেক জেলায় স্থান করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে সারাদেশে ৯২টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম বসানোর কাজ চলছে, যেগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।”

ডা মিয়া বলেছেন, ডিসেম্বর মাস থেকেও নতুন আরো কয়েকটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম বসানোর কাজ শুরু হবে।

কোভিড-১৯ সক্ষমতা কতটা?

বাংলাদেশে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মিলে মোট ২৯টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল রয়েছে।

এছাড়া ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই মূহুর্তে সারা দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১৩,৬০২ টি।

হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সংখ্যা ৬০৪ টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সংখ্যা ৩৯৫ টি।

সতের কোটি মানুষের দেশে জরুরি স্বাস্থ্য সেবার এ চিত্রই বলে দেয় কতটা সংকটে রয়েছে এই খাত।

লকডাউন কি আসতে পারে আবার?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের পরিস্থিতি যদি দ্রুত অবনতি হয় তাহলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, সে পরিকল্পনাও আগে থেকে করে রাখা জরুরি।

সংক্রমণ যদি দ্রুত বাড়ে, সেক্ষেত্রে আরেকদফা লকডাউনে যাবে কি না, সে চিন্তাও আগেভাগে করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

কিন্তু লকডাউনে যাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

তিনি বলেছেন, “আমাদের অর্থনীতির জন্য লকডাউন কোন সমাধান নয়। অলরেডি সাতে সাত মাসে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছে। সুতরাং লকডাউন হচ্ছে আমাদের একেবারে শেষ অপশন। ধরেন একটা পাড়া লকডাউন করা হলে পাঁচ হাজার মানুষের কর্ম স্থবির হয়ে গেল, তখন তাদের কর্মভার কিভাবে ম্যানেজ হবে?”

তিনি বলেন, “আমি বলবো যে আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে, যাতে আমরা আক্রান্ত না হই সেটা খেয়াল রাখা।”

এই মূহূর্তে মহামারি মোকাবেলায় প্রত্যেক দেশই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকা এবং স্বাস্থ্য সেবার সক্ষমতা দ্রুত বাড়ানো এই দুটো কাজই একসঙ্গে করতে হবে।

দেশ-বিদেশের সকল খবর সবার আগে পেতে কলম কথা এর ইউটিউব চ্যানেল এ সাবস্ক্রাইব করুন

দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।